
প্রকাশিত: Mon, Jun 3, 2024 2:58 PM আপডেট: Tue, May 6, 2025 4:05 PM
‘ঘৃণা বাড়িয়ে নেওয়ার কাজে ব্রতী থাকেন কেউ কেউ’
স্বকৃত নোমান
কবি শঙ্খ ঘোষের বাসায় নিয়মিত আড্ডা হতো। একবার দুজন অভ্যাগতের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিলেন শঙ্খ। দুজন একটি পত্রিকা সম্পাদনার সঙ্গে যুক্ত আছেন অনেকদিন ধরে। ধর্মপরিচয়ে তাঁরা মুসলিম। সাহিত্যচর্চা থেকে শুরু করে আলোচনা গড়াল সংখ্যালঘুদের আস্তিত্বিক সমস্যায়, সাম্প্রদায়িক জটিলতায়। দুজন বলছিলেন আজও কীভাবে তাঁদের সহ্য করতে হয় উদাসীনতা, উপেক্ষা, এমনকি ঘৃণা। হঠাৎ তাঁরা হিন্দু বুদ্ধিজীবীদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করতে লাগলেন। মুসলিম গরিমাকে ঢেকে রাখবার জন্য হিন্দু বুদ্ধিজীবী সমাজ কীভাবে অনেক বিকৃত তথ্যকে প্রশ্রয় দিয়ে যায় বছরের পর বছর, তার কয়েকটি উদাহরণ শোনালেন।
সেসব অভিযোগের মধ্যে একটি হচ্ছে, মুক্তক ছন্দের প্রবর্তক রবীন্দ্রনাথ নন, নজরুল। পরিকল্পিতভাবে হিন্দু বুদ্ধিজীবীরা এই সত্যকে গোপন করে চলেছেন বহুদিন ধরে। অসমপঙক্তিক পদ্যে ছন্দস্রোত বইয়ে দিয়ে ছন্দের এমন একটা প্রবল মুক্তি যে নজরুলই এনেছিলেন রবীন্দ্রনাথের আগে, সেকথাটা এভাবে ভুলিয়ে দিতে হবে কেন? হিন্দু বুদ্ধিজীবীরা এর প্রতিবাদ করে না কেন?
শঙ্খ ঘোষ বিস্ময়ে জানতে চাইলেন, নজরুল কোথায় এনেছিলেন সেই মুক্তি? তাঁদের একজন বললেন, কেন, বিদ্রোহী কবিতায়! শঙ্খ বললেন, আপনি শুনলেন কোথায় এটা? লোকটি বললেন, এই তো কদিন আগেই বাংলাদেশের একজন এটা প্রমাণ করে দিয়েছেন। শঙ্খ বললেন, আপনি তার কথা বিশ্বাস করলেন, অথচ আপনি এটা জানেন না যে রবীন্দ্রনাথের ‘বলাকা’র কবিতাগুলো লেখা হয়েছিল যখন, নজরুল তখনও কবিতা জগতে পৌঁছেনইনি। বিস্ময়ে লোকটি বললেন, তাই নাকি। রবীন্দ্রনাথের ‘বলাকা’ কি নজরুলের ‘বিদ্রোহী’র আগে লেখা? শঙ্খ হেসে বললেন, অন্যের কথা বিশ্বাস না করে নিজে সন-তারিখটা মিলিয়ে নিলেই তো হয়।
শঙ্খ ঘোষ তাঁর ‘কান-ঢাকা টুপি’ প্রবন্ধে লিখছেন, ‘সহজেই যেটা মিলিয়ে দেখা সম্ভব ছিল, এতদিন যে তা দেখেননি ওঁরা, এর মধ্য থেকে একটা কথা আন্দাজ করা যায়। বোঝা যায় যে, ওই প্রচারটা বিশ্বাস করতে ওদের ভালো লাগছিল। শুধু তাঁদের নয়, তাঁদের মতো অনেকের। সংগত অভিযোগের সঙ্গে কিছু নিত্যনূতন অসংগত অভিযোগ জুড়ে নিতে নিতে মনের মধ্যে বিরোধের মাত্রাটাকে এভাবে অনেক বাড়িয়ে নেওয়া যায়, বড়িয়ে দেওয়া যায়। ঘৃণা বাড়িয়ে নেবার কাজে ব্রতী থাকেন কেউ কেউ, সামাজিক পদ্ধতিরই একটা অংশ হয়ে ওঠে এটা। এঁদের মতো অনেকে অগোচরে তার কবলে পড়ে যান এবং করতে থাকেন কলের মতো একটা কাজ। যিনি অথবা যাঁরা এইরকম রটনা করেন সজ্ঞানে, সহজ মানুষের একটা বিশ্বাসপ্রবণতাকে তাঁরা কাজে লাগাতে চান, পারস্পরিক বিদ্বেষটাকে জাগিয়ে রাখতেই চান তাঁরা।’
লেখক: কথাসাহিত্যিক
আরও সংবাদ
চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে
‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!
কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!
সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি
ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
মতিউর প্রতিদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৮৩ ব্যাচের বন্ধুদের গ্রুপে সৎ জীবন যাপনের উপদেশ দিতেন!

চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে

‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!

কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!

সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি

ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
